Transliteration — ট্রান্সলিটারেশন — ṭrānsliṭārēśon

আমি কিছুদিন যাবৎ আমার বাংলা লেখাগুলোর ইংরেজি ট্রান্সলিটারেশন করছি, যাতে আমার অবাঙালি বন্ধুরা পড়তে পারে। কিন্তু করতে গিয়ে বুঝতে পারলাম যে ইংরেজি ভাষাটা মোটেই এর জন্য উপযুক্ত নয়। সংস্কৃত ভাষা থেকে উৎপুত্য যে কোনো ভাষাতেই এমন কিছু কিছু শব্দ আছে যা ইংরেজি অক্ষর ব্যবহার করলে অন্য আরেকটি শব্দের সঙ্গে তফাৎ করা যায়না। তা ছাড়া আরও বেশ কিছু শব্দ যার ইংরেজিতে কোনো অক্ষরই নেই। ছোটবেলায় এস.এম.এস করতে গিয়ে আমরা এমন সমস্যায় পরতাম, কিন্তু তখন আর উপায় ছিলোনা।

এখন, উপায় আছে। রোমান/ল্যাটিন ভাষার অক্ষরবলির ব্যবহার করলেই সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। আবিস্কার করলাম যে সংস্কৃত থেকে ল্যাটিনের অনুরূপ বর্ণনা করা যায় এমন একটা নিয়মাবলী ইতিমধ্যে চলিত রয়েছে— International Alphabet of Sanskrit Transliteration (IAST)/ISO 15919.

ঘেঁটেঘুঁটে দেখলাম, এরও কিছু কমতি রয়েছে। তা ছাড়া, বাংলা ভাষার কিছু নিজস্বতা আছে, যা সংস্কৃত-র রীতি মানলে উচ্চারণর হবে ঘেঁটে ঘ! তাই নিজের মতন পড়াশোনা করে একটা নিয়মাবলী ঠেউর করলাম। দিয়ে সেটি লাগিয়ে আমার নিজের লেখা যত বাংলা কবিতা, সেগুলোকে করে দিলাম ট্রান্সলিটারেট্! করতে গিয়ে যে গন্ডগোলগুলো চোখে পরলো সেগুলোকে এড়াতে গিয়ে রীতি হলো আরো পোক্ত। আজ সেটাই আপনাদের কাছে পেশ করছি।

  • স্বরবর্ণ
    • অ : ô
    • আ : ā
    • ই : i
    • ঈ : ī
    • উ : u
    • ঊ : ū
    • ঋ : r̥
    • ঌ : l̥
    • এ : ē
    • ঐ : ōi
    • ও : ō
    • ঔ : ōu
    • ঃ : ḥ
    • ং : ŋ
    • ঁ : ⁿ
  • ব্যঞ্জনবর্ণ
    • ক : k
    • খ : kʰ
    • গ : g
    • ঘ : gʰ
    • ঙ : ŋ
    • চ : c
    • ছ : cʰ
    • জ : j
    • ঝ : jʰ
    • ঞ : ñ
    • ট : ŧ
    • ঠ : ŧʰ
    • ড : đ
    • ঢ : đʰ
    • ণ : ṇ
    • ত : t
    • থ : tʰ
    • দ : d
    • ধ : dʰ
    • ন : n
    • প : p
    • ফ : pʰ
    • ব : b
    • ভ : bʰ
    • ম : m
    • য : y
    • র : r
    • ল : l
    • ব : v
    • হ : h
    • শ : ś
    • ষ : ṣ
    • স : s
    • য় : ẏ
    • ড় : ṛ
    • ঢ় : ṛʰ
  • বিশেষ শব্দ
    • ৎ : t <বদলানোর প্রয়োজন নেই।>
    • ্ : <প্রয়োজন নেই।>
  • ৳ : <হ্যাঁ, বাংলা ভাষায় “টাকা”-র জন্য অক্ষরের উৎপত্যি ভারতের ₹-চিহ্ন তৈরি হওয়ার আগে থেকেই ছিল! আজকের দিনে দাঁড়িয়েও ভারতীয় বাঙালিরা বাংলায় লেখার সময় এই চিহ্নটি স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারেন।>

কয়েকটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে।

  1. বাংলায় যেহেতু ইংরেজির মতন ছোট-বড় অক্ষ্যর নেই, সেহেতু ট্রান্সলিটারেশনের সময়েও সব সময় কেবল ছোট অক্ষরই ব্যবহৃত হবে।
  2. অ্যে” উচ্চারণটিকে বোঝাতে “æ” ব্যবহৃত হবে। যেমন, “যেমন — yæmon”।
  3. সংস্কৃত-এ যে উচ্চারণটি হয়, তা বাংলার থেকে আলাদা, এবং সরল। বাংলায় কিছু ক্ষেত্রে হিসেবে উচ্চারিত হয়। এ ছাড়া ও-কার মাত্রা তো আছেই। তাই ô, ō ছাড়াও “o” ব্যবহৃত হবে। ō ব্যবহার হবে মাত্রায় বা আলাদা “”-এর বদলে: যেমন, “কালো — kālō”। ô ব্যবহৃত হবে বিশেষত “” উচ্চারণটি বোঝাতে: যেমন, “অসফুটে — ôspʰuŧē”। o ব্যবহার হবে সেখানে, যেখানে মাত্রার বর্তমানে বা অবর্তমানে “”-এর বদলে আসলে “” উচ্চারণ হচ্ছে: যেমন, “যেমন — yæmon”, “প্রমাণ — promāṇ”, “অভিসার — obʰisār”। একটা যুক্ত-উদাহরণ রইলো: “অন্তত — ôntoto”।
  4. ” বা আ-কার বোঝাতে ā ব্যবহৃত হলেও, “অ্যা” উচ্চারণটি সম্পূর্ণ করতে লেখা হবে a, যেমন “ব্যাকুল — bẏakul”।
  5. বাংলায় /y -এর উচ্চারণ /j -এর মতো। এই ক্ষেত্রে বাংলা সংস্কৃত-র থেকে আলাদা। কিন্তু তাও য বোঝাতে y লেখাই বাঞ্ছনীয়। যেমন, “যেমন — yæmon”।
  6. সংস্কৃত-এ ड़/ড় -এর জন্য এবং ढ़/ঢ় -এর ḍʰ ব্যবহৃত হয় কারণ এগুলি যথাক্রমে আর -এর মতন শোনায়, কেবল তফাৎ হলো জিভের সাথে মুখের ওপরের ছাদটির সংঘর্ষ ঘটে। কিন্তু বাংলায় যেহেতু /र, ড়/ड़, আর ঢ়/ढ़ তিনটেই /र/r হিসেবে উচ্চারিত হয়, সেহেতু ড়/ड़ বোঝাতে আর ঢ়/ढ़ বোঝাতে ṛʰ ব্যবহার করলে পাঠকের সুবিধে হবে, যিনি সবকটিকেই / হিসেবে পড়তে পারবেন।
  7. বাংলায় দুটো -ই একই ভাবে উচ্চারিত ও লেখা হলেও, দ্বিতীয়টা যখন সন্ধিতে ব্যবহৃত হবে, তখন v লেখা হবে, নীচে নীতি#9 দেখুন।
  8. বাংলায়ে , , আর তিনটেই উচ্চারিত হয় “”-এর মতন — কিন্তু তাও আলাদা লেখা হয় তাই এখানেও হলো।
  9. সন্ধি — এ এক মারাত্মক জিনিস! রীতি বিবেচনা কঠিন, তাই আমি কিছু উদাহরণ দিচ্ছি:
  • ত্ব : tv, জ্ব : jv, ন্ব: nv — এখানে সংস্কৃত-র -র জন্য v ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়; তবে খেয়াল রাখতে হবে উচ্চারণ হবে প্রথম অক্ষরটি দুবার — ত্ত/tt, জ্জ/jj, ন্ন/nn, ইত্যাদি।
  • স্ত : st, স্ন : sn — “”-এর উচ্চারণ “” -এর মতন হয় না।
  • স্মৃ : smr̥ — যদিও উচ্চারণ হবে śⁿr̥-এর মত।
  • ‌ক্ষ :
    • উচ্চারণ যখন -এর মতন, যেমন “ক্ষিদে” — তখন “”।
    • উচ্চারণ যখন খ্খ-এর মতন, যেমন “পক্ষ” — তখন সংস্কৃত-র আর সরলতার খাতিরে “kṣ”।

ভবিষ্যতে আরো নতুন নিয়মের প্রয়োজন পরলে এতে জুড়ে দেবো। আশা করি আপাতত এগুলো আপনাদের কাজে লাগবে। অসুবিধে হলে নিশ্চয়ই জানাবেন, কথোপকথনের মাধ্যমে রীতিগুলি আরো পোক্ত হবে।

উদাহরণ-স্বরূপ আমার বাংলা কবিতার পাতাটি রাখলাম, প্রত্যেকটি কবিতায় ট্রান্সলিটারেশন পাবেন।

One thought on “Transliteration — ট্রান্সলিটারেশন — ṭrānsliṭārēśon

Leave a comment