পূজোর একটা গন্ধ আছে, জানেন? একটা এঁদো পচা খড়ের গন্ধ, মাটি পোড়ার গন্ধ, রঙের গন্ধ। টাকার গন্ধ, নতুন জামার গন্ধ, roll-chowmein’এর গন্ধ, আনন্দের গন্ধ। আশার গন্ধ। আকাঙ্ক্ষার গন্ধ। পেচপেচে টিপটিপে বৃষ্টির গন্ধ, ঘামের গন্ধ, খানিক বিরক্তির গন্ধ। একটু rum-এর গন্ধ। একটু খুনসুটি, খানিক প্রেম, অনেক চেষ্টা আর একটু সাফল্যের, গন্ধ। ফুচকার জলের গন্ধ। আর কী যেন, বেশ একটা মেলানো-মেশানো, আবেগে জর্জরিত বাঙালির সরু গলিতে প্রাণখুলে হাসার গন্ধ, সময়ের হিসেব করতে ভুলে যাওয়ার গন্ধ, আর হুট করে কোত্থেকে দশমী চলে আসার গন্ধ। এই গন্ধটায় যে নাক হয়ে গেছে বড়, ঢাকের বাদ্যে যে প্রাণ উঠতে শিখেছে নেচে, সেই নাক, সেই প্রাণ ― কেমন বোঝার মতোন লাগছে, কারণ চারপাশে: কোনো গন্ধ নেই, আর কেবলই শান্তি। যে ভীড়কে সারা বছর অনেক দূরে রেখে বেদম আনন্দে দিন কাটাই, সেই ভীড়ের মধ্যে মিশে গিয়ে বেশ কিছু ঠেলা, গুঁতো, দুটো বাংলা গালি ― খেতে হেবী ইচ্ছে করছে আজ। অষ্টমীর দুপুরের খিচূড়িটার গন্ধ যেন স্মৃতির ডগায় ঝুলছে ― চাইলেই টুক করে খসে পরবে আর চারপাশের বিষণ্ণতাটাকে গভীর করে দিয়ে, সন্ধিপূজোর গন্ধটাকে মনে করিয়ে দিয়ে, চলে যাবে নবমীর আসন্ন সোমবারে, যে সকালটায় উঠেই মনে হবে মহাবিশ্বের এ কোন প্রান্তে পৌঁছে গেলুম যেখানে নবমীর সকালে গলা খাঁকড়ে পাড়ার মস্তান দাদাটা মাইকে বলে না, “আপনারা যারা যারা মহাআআনবমীর…” পূজোর একটা গন্ধ আছে, জানেন? গন্ধটা সেই ১০৮টা পদ্মফুলে, গন্ধটা সেই নোংরা গঙ্গায় কলাবৌ স্নানের মাটির প্রলেপে, গন্ধটা শোভাবাজার রাজবাড়ির উঠোনে, গন্ধটা অর্ধদগ্ধ ধুনূচিতে, বৌদিদের সাদা-লালপাড়ে লেগে যাওয়া সিঁদুরে, বাগবাজারের ঠাকুরের বিসর্জনে। আর সেই গন্ধে আমার সুদূরপারের ঘরটা এখন ম ম করছে।